More

    বিদেশ ছেড়ে দেশে ফিরে গরুর খামারে স্বাবলম্বী আগৈলঝাড়ার শামিম

    অবশ্যই পরুন

    আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের সেকেন্দার আলী শিকদারের ছেলে শামিম সিকদার। জীবিকার তাগিদে ২০০৮ সালে পাড়ি জমান দুবাই। কিন্তু নিজ গ্রামের মাটির টান, শেকড়ের টান বেশি দিন থাকতে দেয়নি বিদেশে তাকে। এক বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন শামিম। দেশে ফিরেই শুরু হয় তার ভাগ্য বদলের গল্প।

    অল্প কিছু দিনের মধ্যে তার নিজ বাড়িতে রাইয়ান ডেইরি এন্ড ফ্যাটানিং খামার নামে একটি সমন্বিত গরুর খামার তৈরি করেন। নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি করেছেন গ্রামের বেশ কিছু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান। সেই ভাগ্য বদলের গল্প জানিয়েছেন শামিম সিকদার। শামিম বলেন, বিদেশের মাটিতে থাকলেও মনে সবসময় একটা টান কাজ করত, নিজের মাটির টান, শেকড়ের টান। সেখানে হয়তো আয় ভালো ছিল, জীবনও বেশ আরামদায়ক ছিল, কিন্তু নিজের গ্রাম, নিজের মানুষের কাছে ফেরার আকাঙ্ক্ষা কখনো শান্তিতে থাকতে দেয়নি।

    অবশেষে এক বছরের মাথায় সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসা। সবাই ভেবেছিলো বিদেশের চাকরি ছেড়ে এভাবে ফিরে আসা হয়তো ভুল হবে। কিন্তু আমার মাথায় ছিল পরিষ্কার পরিকল্পনা। ছোটবেলা থেকেই বাবার গরু লালন পালন ছিল খুব পছন্দের, তাই দেশে ফিরে ২০টি গাভি ও ষাড় ক্রয়ের পর খামার শুরু করি। প্রথমে অনেক কষ্ট হয়েছে, যেমন অভিজ্ঞ লোক পাওয়া ছিলো কঠিন, রোগ— বালাই সামলানো, বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা।

    কিন্তু শামিম হাল ছাড়েনি। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা, ভালো জাতের গরু সংগ্রহ করা, পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত যত্ন নিতে শুরু করেন শামিম। ধীরে ধীরে তার খামার বড় হতে থাকে। এখন তার খামারে রয়েছে শতাধিক গরু। শুধু নিজের পরিবারের জন্যই নয়, আশেপাশের বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই খামারকে কেন্দ্র করে।

    গ্রামের যুবকরাও এখন তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। শামিম জানান, শখের বসে ২০১২ সালে ২০টি গাভি ও ষাঁড় দিয়ে শুরু হলেও এখন তার খামারের বিস্তৃতি অনেক। সব শেষ কোরবানিতে ৪৭০টি গরু বিক্রি করেছেন। এখন খামারের সঙ্গে সঙ্গে যোগ হয়েছে পুকুরে মাছ চাষ। সমন্বিত সেই খামার থেকে খরচ বাদে এখন তার মাসে আয় হচ্ছে প্রায় চার লাখ টাকা।

    শামিম সিকদার জানিয়েছেন, বর্তমানে তার খামারে দেশি—বিদেশি জাতের শতাধিক গাভী ও ষাঁড় এবং এক একরের দুটি পুকুরে মাছের খামার রয়েছে। এছাড়া চার একর জমিতে তিনি খামারের গরুর খাবারে জন্য ঘাস চাষ করেছেন। এসব দেখাশোনা করতে খামারে সারাবছর বেতনভুক্ত ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। শামিমের গরুর খামারে কাজ করা ছাব্বির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চাহিদা পূরণ করতে পারছি।

    শামিম প্রমাণ করেছেন, বিদেশে না গিয়েও, নিজের মাটিতে থেকে সফল হওয়া যায়, যদি মন থেকে চেষ্টা করা যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, দুটি পুকুরের মাঝখানে গরু রাখার দুটি শেড ও একটি দোতলা দালান। দুটি শেডে বিদেশী জাতের গাভী ও বাছুর এবং দালানের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ষাঁড় গরু রাখা হয়েছে। শামিম শিকদার আরও বলেন, বর্তমানে খামারে প্রায় দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে।

    ১০জন স্থায়ী কর্মচারী কাজ করছেন। খরচ বাদে বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আমার ইচ্ছে খামারে যেন ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি জানান, বর্তমানে খামারের গাভি দিয়ে প্রতিদিন তিনশ’ লিটার দুধ পাই। যা বাজারজাত করতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। খামারে ষাট হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে।

    ভবিষ্যতে এই খামারের গরুর দুধ থেকে খাঁটি ঘি বিক্রি ও এলাকায় একটি মিষ্টির দোকান দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। শামীম এখন গর্ব করে বলেন, দেশের মাটির ঘ্রাণই আসল সম্পদ। আমি বিদেশে স্বপ্ন খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু স্বপ্নের আসল ঠিকানা পেয়েছি নিজের গ্রামে। এব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ সরকার বলেন, নতুন নতুন খামার সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে থাকি।

    শামিম সিকদার সমন্বিত খামার গড়ে সফল হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তাকে (শামিম) দেখে অনেকেই খামার গড়তে উৎসাহিত হচ্ছেন। সকল খামারিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ পাশে রয়েছে।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    বরিশালে আবাসিক হোটেল পপুলার থেকে ১৬ নারী-পুরুষ আটক

    বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ১৬ নারী-পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে নগর‌ীর পোর্ট...