দ্বীপ জেলা ভোলার অবহেলিত জেলেরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে এখানে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। জেলেদের সেই দাবি এবার পূরণ হতে চলেছে। তাদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার এখানে দুটি আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক এ দু’টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।
জেলা সদর ভোলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী কাঁচিয়া ইউনিয়ন ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী কাশেম বাজারে অবতরণ কেন্দ্র দুটি নির্মাণের কাজ চলমান। জেলার চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজে বহু পুরনো একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থাকলেও সেটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। এছাড়া অতীতে ভোলার অন্য কোথাও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ছিল না। তাই আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ ছিলো এখানকার জেলেদের সময়ের দাবি।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব খোলা কাগজ কে জানান, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মৎস্য অধিদপ্তরের জলবায়ু সহিষ্ণু সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (এসসিএমএফপি) এর আওতায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র দুটিতে এখানকার জেলেরা যেমনি মৎস্য আহরণের পর তা প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং ও বিপণন করতে পারবেন, তেমনি মাছ ধরা ও বেঁচাকেনা পেশায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। এতে করে বিপুল সম্ভাবনার উপকূলীয় জেলা ভোলার অর্থনীতিতে স্বচ্ছলতার গতি ফিরে আসবে।
তিনি জানান, মৎস্য উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ এ জনপদে মাছ প্রক্রিয়াজাতে আধুনিক সুবিধা না থাকায় বহু বছর ধরে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ছিলো এ অঞ্চলের জেলেদের যৌক্তিক দাবি। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসানের পর অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভোলা সদরের মেঘনা তীরবর্তী কাঁচিয়া ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে নির্মাণ করছে এ দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
ভোলা জেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য সুত্রে জানা যায়, তিন হাজার ৪০৩ দশমিক ৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপ জেলাটি মেঘনা, তেতুলিয়া, ইলিশা, কালাবাদর, বেতুয়া ও বঙ্গোপসাগর মোহনায় বেষ্টিত। উপকূলীয় এ অঞ্চলে সরকারি হিসেবে ১ লাখ ৬৮ হাজার নিবন্ধিত এবং বেসরকারি হিসেবে অনিবন্ধিত দুই লক্ষাধিক জেলে মাছ শিকার ও মৎস্য ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে ইলিশ’সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা, এমনকি ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৎস্য পেশাকে আধুনিকীকরণ ও সময়োপযোগী করতেই এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। ভোলার মৎস্য বিভাগ আরও জানান, আধুনিক এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে একসাথে অর্ধশত জেলে মাছ নামানো ও বিক্রি করার সুযোগ পাবে।
এ কেন্দ্রে অকশন শেড, প্যাকিং শেড, ইন্সপেকশন রুম, অফিস, আড়ৎ ঘর, আবাসিক সেক্টর, আইসপ্ল্যান্ট ভবন, কোয়ালিটি কন্ট্র্রোল ল্যাবসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকবে। চলতি বছরের ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এ বছরের ডিসেম্বরে অবতরণ কেন্দ্র দুটি চালু হবে বলে ভোলার মৎস্য দপ্তর জানিয়েছে।
আধুনিক এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র দুটি চালু হলে ভোলার মৎস্যজীবীদের সুযোগ-সুবিধায় এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হবে বলে মৎস্য পেশায় নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে মৎস্য অবতরন কেন্দ্র নির্মিত হওয়ায় ভীষণ খুশি ভোলার জেলেরা।গত সোমবার জেলা সদরের কাঁচিয়া ইউনিয়নের মৎস্য অবতরন কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে কথা হয় সাধারণ জেলে ও মাছ ব্যবসয়ীদের সাথে। সেখানকার মাঝের চরের জেলে সফিক মাঝি বলেন,অতীতে নদী হতে মাছ ধরে আমরা তা সংরক্ষণ করতে পারতাম না।
মোকামে পাঠানোর আগেই বহু ইলিশ পঁচে যেতো। কিন্তু এবার মৎস্য অবতরন কেন্দ্র নির্মাণ হলে আমাদের আর সেই লোকসানের ভয় থাকবেনা। কাঁচিয়া মাছ ঘাটের আড়ৎদার সামসুউদ্দিন, সাজু ও রমিজ মিয়া বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ হলে আমাদের ব্যবসা আরো চাঙ্গা হবে।
ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের পচনশীলতা নিয়ে আমদের আর চিন্তায় থাকতে হবেনা। মৎস্য অবতরন কেন্দ্র নির্মাণে খুবই খুশি। এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ায় ভোলার জেলে সম্প্রদায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।