স্টাফ রিপোর্টার: পটুয়াখালী গলাচিপা উপজেলার গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমরান (১৫) এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের মা সাবেরা সুলতানা লিয়া। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে আমরান অপমৃত্যুতে তার জীবন শেষ করে দিল। আমি এলাকাতে উপস্থিত ছিলাম না। কর্মসূত্রে আমি এলাকার বাহিরে ছিলাম।
রোদেলা নামের একটি মেয়ের সাথে আমার ছেলের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিন তার সাথে এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরি করতো এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা-বার্তা হতো। এক পর্যায়ে সে আমার ছেলেকে বলেছিল ” ‘ব্রো’ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমাকে তুমি ফোন দিওনা। আমরান বলে, সম্পর্কের মানুষ সে ‘ব্রো’ হয় কিভাবে? তোমার সাথে আমার এতোদিনের সম্পর্ক, ভালোবাসা মানুষকে সন্মান শিখায়, ভালোবাসা মানুষকে আগলে রাখে।
সে তাকে ফোনের লাইনে রেখেই বলেছিল তুমি মরো, তুমি মরলে আমার কি?” ‘ তিনি আরো জানান, “একটি মেয়ে সে ক্লাস সেভেনে পড়ে, তার মুখ থেকে এই কথা বের হয় কিভাবে? সে সমস্ত জাতির জন্য কলঙ্ক। আমি চাই আমার আমরান যেভাবে মারা গেছে, কারো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়, আমার মতো যন্ত্রণা যেন কোন মা ভোগ না করে। আর কোন মায়ের সন্তান যেন এই রোদেলার ছলনায় না পড়ে। আমি সমাজের কাছে এই বিচারটুকু চেয়েছি এই রকম মেয়ে যেন এই সমাজে থাকতে না পারে।
তার প্রতারণায় যেন কেউ না পড়। আইনি প্রক্রিয়ার কোন কাজ আমি করতে চাইনি কারণ আমার যেভাবে কষ্ট পেয়ে মারা গেছে সে কষ্ট আর দিতে চাইনি। যদি কাটাছেঁড়া করতাম সে আরো কষ্ট পাইতো। তাই যন্ত্রণা সয়েও আমি নীরব থেকেছি। আমি ওসি স্যারকে জানিয়েছি, আমি সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি এভাবে এই মেয়ে যেন এই সমাজে না থাকতে পারে। আমি কোন মামলায় যাইনি।
সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে আমার চাওয়া আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়। তাকে এবং তার পরিবারকে এই সমাজ থেকে বিতারিত করা হোক এবং সে যেন কোন স্কুলেই পড়তে না পারে।” সে জানান, “আমি মায়ের আর্তনাদ এই সমাজের সকল মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে চাই যেন তারা তাদের সন্তানকে আগলে রাখে। কেউ যেন পথভ্রষ্ট না হয়।’ সে আরো জানায়, “আমি ঐ মেয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে টিসি দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছি, সে বলেছে আমার কাছে লিখিত কোনো নোটিশ আসেনি। যদি তার অভিভাবক আসে তাহলে তাদের সাথে কথা বলতাম। আমি তাকে জানাই ঐ মেয়ের জন্য হাজারো মেয়ে নষ্ট হবে। যদি আপনি তাকে একটি টিসি দেন তাহলে আমি শান্ত থাকবো।”
পরে আমরানে সহপাঠীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট, শনিবার বিকেল ৪টার দিকে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের শের-ই-বাংলা সড়কের একটি ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আমরান উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত অসীম হাওলাদারের ছেলে। সে গলাচিপা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পরিবার সূত্রে জানানো হয়, ২০১৮ সালে আমরানের বাবা মারা যান। পরে তার মা সাবিরা সুলতানা লিয়ার অন্যত্র বিয়ে হয়।
বর্তমানে আমরান তার আপন ভাই ও নানী নাজমুন নাহারের সঙ্গে শের-ই-বাংলা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল। তার বড় ভাই চিকিৎসার কাজে ঢাকায় রয়েছে। শনিবার দুপুরে নানী বাসার বাইরে কাজে যান। পরে বাসায় ফিরে ডাকাডাকি করেও আমরানের সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন, শয়নকক্ষে বৈদ্যুতিক ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছে আমরানের দেহ। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে এবং থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল যায়। পরে দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

