নিজস্ব প্রতিবেদক: থরেথরে সাজানা রয়েছে বাহারি ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কার। সবাই জানে জুয়েলারির দোকান। অথচ দোকানের এই আলোর পেছনে চড়া সুদে চলছে জমজমাট স্বর্ণ বন্ধকী ব্যবসা। বরিশাল নগরীর কাটপট্টির ‘মা জুয়েলার্স’ এখন চরা সুদের কারবারে সরগরম। ওই জুয়েলার্সে স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে বিপাকে পড়েছেন ইউসুফ মাঝি নামের এক ব্যক্তি।
৬১ হাজার ৫০০ টাকার ঋণের ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও সাড়ে ৪ বছরে সেই টাকা সুদ আসলে দাড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায়। উপায়ান্ত না পেয়ে বরিশাল মট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ইউসুফ মাঝি।
ইউসুফ মাঝি বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্নকাঠি গ্রামের মৃত শাহাদাত মাঝির ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে- ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ২ ভরি ১ আনা ৫ রত্তি ওজনের এক জোড়া স্বর্ণের চুড়ি ও এক ছড়া স্বর্ণের চেইন বন্ধক রেখে মা জুয়েলার্সের মালিকের কাছ থেকে ৬১ হাজার ৫০০ টাকা ধার নেন।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় তিনি ২৮ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্ধকী স্বর্ণ ছাড়াইয়া নিতে পারেনি। চলতি বছরের গত ৩০ জুলাই তিনি মা জুয়েলার্সে টাকা পরিশোধ করে তার বন্ধকী স্বর্ণ ফেরৎ আনতে গেলে ওই জুয়েলার্সের মালিক তার কাছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওনা হয়েছে বলে দাবি করেন।
ইউসুফ মাঝি অভিযোগ করে বলেন- আমি মা জুয়েলার্সের মালিকের কাছ থেকে মাত্র ৬১ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করেছিলাম। এমনকি লভ্যাংশ ২৮ হাজার টাকা পরিশোধও করেছি। কিন্তু কোনমতেই তারা আমার কাছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়ার হওয়ার কথা না। মা জুয়েলার্সের মালিক অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বেশি হারের সুদ হিসাব করে আকাশচুম্বি সুদ ধার্য্য করেছে।
আমি তাদেরকে সুদের টাকা কমানোর জন্য বললে সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। এমনকি টাকা পরিশোধ না করলে আমার স্বর্ণ ফেরৎ দেবে না বলে জানায়। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে মা জুয়েলার্সের মালিক শ্যামল কুমার দেকে প্রশ্ন করা হলে তার ছেলে ইমরান বলেন- আমাদের বন্ধকী ব্যবসার লাইসেন্স রয়েছে। আর ইউসুফ মাঝির কাছে যে টাকা পাওনা হয়েছে, তার হিসেব-নিকেশ ঠিক আছে। তাকে ৫% সুদ হারে টাকা ধার দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন- অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন- জুয়েলারি ব্যবসার সাথে সুদের কারবার আইনত বৈধ নয় এবং এটি প্রতারণামূলক। জুয়েলারি দোকানে স্বর্ণ বন্ধক রেখে উচ্চ সুদে ঋণ দেওয়া অবৈধ এবং এর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এই অবৈধ সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।