ঝালকাঠির রাজাপুরের মঠবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথপুরের আলোচিত আবুল বাশার হত্যা মামলার মূল আলমত ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল মামলার আইও রাজাপুর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনের ড্রয়ার থেকে উধাও হয়ে গেছে।
এমনকি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দেলোয়ার হোসেন মামলার বাদি রাজমিস্ত্রী আবুল বাসারের স্ত্রী মোসাঃ আসমাকে আসামীদের পক্ষ নিয়ে ১০ লাখ টাকার নিয়ে মামলা তুলে নেয়ার অফার দিয়েছে বলে মামলার বাদি আসমা বেগম সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন।
সোমবার সকালে রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাবে হত্যার শিকার রাজমিস্ত্রী আবুল বাসারের স্ত্রী মামলার বাদি মোসা. আসমা ও তার পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব অভিযোগ করেন।
আবুল বাসারের স্ত্রী মোসাঃ আসমা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, মামলার ১ নম্বর আসামি নাজমুল বর্তমানে কারাগারে বন্ধী রয়েছে। নানা ভাবে শুনতে পাচ্ছি জামিনে বের হয়ে এসে তাকে ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
এছাড়া মামলার আইও রাজাপুর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের বাদ দিয়ে চাজর্শীট দিতে পারে এমন আশঙ্কারও অভিযোগ করেন বাদি।
মামলার বাদী আসমা অভিযোগ করে জানান, ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণ সাউথপুর এলাকায় স্থানীয় শুকুরের চায়ের দোকানের সামনে তার স্বামী আবুল বাশারকে আসামি নাজমুল হাসান, রাতুলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় তিনি রাজাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী নাজমুলের স্বীকারোক্তিতে আরও তিন আসামী তরিকুল ইসলাম তারেক, আশরাফুল ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি তরিকুল ইসলাম তারেক জামিনে বের হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোসাঃ আসমা আরও অভিযোগ করেন, ছেলে মেয়েদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য থানায় স্বামীর মোবাইল ও সিম আনতে গেলে মামলার তদন্তকারীর কাছে আলামত হিসেবে হেফাজত থাকা নিহতের আবুল বাসারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে গেছে বলে জানানয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তখন আসামীদের মোবাইল গুলো বের করে দেখায় কিন্তু তার স্বামীর মোবাইল দেখায় না বলে এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করিয়েন না আপনাকে নতুন মোবাইল কিনে দিবো বলেও জানায় তদন্ত কর্মকর্তা।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, চার্জশীটের খবর নিতে থানায় গিয়ে কান্নাকাটি করলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (দারেগা) বলে দেখি কি করা যায়, নাজমুল (প্রধান আসামী) কে দিয়ে ১০ লাখ টাকা দায় ধারা করা যায় কিনা।
তখন বাদি বলে, স্বামীর জান গেছে, স্বামীর জানের বদলে জান চাই। টাকা হলো হাতের ময়লা, টাকা লাগবে না। টাকা দিয়ে কি করবো। স্বামীকে যে মারছে, সেই খুনিদের ফাসি চাই।
মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্যও তাকে চাপ সৃষ্টি করা বিভিন্ন মহল থেকে। তিনি অভিযোগ করেন, মামলার অগ্রগতি ধীরগতির এবং আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে, থানায় গিয়েও কোন গুরুত্ব পাচ্ছি না।
উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে বর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলেও তিনি জানান। হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচার ও ফাসি দাবি করে প্রশাসনের উর্ধ্বতনদের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজাপুর থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভুয়াকথা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসায় চার্জশিট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আবুল বাসারের মোবাইলটি থানায় তার (এসআই) টেবিলের ড্রয়ার থেকে হারিয়ে গেছে, তা মোবাইল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আসামী ধরা শেষ, এখন শুধু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই চাজশীট দেয়া হবে। বাদিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের বিষয়েও ঝালকাঠি গিয়ে খবর নিতেও বলেছি।
রাজাপুর থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা এসব বিষয়গুলো তার কাছে কেহ বলেনি। হুমকি দিয়ে থাকলে প্রয়োজনী জিডি করা হবে এবং গুরুত্ব দিয়ে বিষয়গুলো দেখা হবে।