মা ইলিশ রক্ষায় নদ-নদীতে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে। এ সময়ে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে মাছ ধরা রোধই মৎস্য অধিদপ্তরের মূল উদ্দেশ্য।
তবে ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৮২ কিলোমিটার মেঘনা নদী নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেবে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নৌ পুলিশ ও হিজলা মৎস্য কর্মকর্তার উদ্যোগে ড্রোন উড়িয়ে গোটা মেঘনায় নজর রাখা হবে। একইসঙ্গে অভিযান পরিচালনার জন্য জেলায় ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, এবার দিনের বেলা জেলেদের নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। রাতেও তাদের অভিযান চলবে। কিন্তু বিশাল মেঘনার ৮২ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও র্যাব তাদের সঙ্গে যৌথ অভিযানে থাকবে। সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য। বিশাল মেঘনা নজরে রাখার জন্য তারা এবার ড্রোন বসাবেন। অন্তত চারটি ড্রোন বসিয়ে যেখানে ইলিশ ধরা হবে, সেখানে স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালানো হবে।
এ বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি বলেন, আমরা মা ইলিশ রক্ষায় সচেতনতা সভা করেছি। দুটি স্পিডবোট দিয়ে অন্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চলবে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি অবৈধ মৎস্য শিকারিদের অনুপ্রবেশ বন্ধে নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ এবং অত্যাধুনিক মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট্ এর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হবে । পাশাপাশি, দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ এর অংশ হিসেবে নৌবাহিনী নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে। দরকার হলে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চালানো হবে। থাকবেন তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটও।
বরিশাল নৌ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ড্রোন দিয়ে নজর রাখা হবে।
এদিকে এসব উদ্যোগে জেলার ৭৯ হাজার জেলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় হতাশার সুর জেলেদের মধ্যে। তারা জানান, সময়মতো চাল পান না। যা পান, তা-ও কম দেওয়া হয়। তাছাড়া মহাজনের দাদনের চাপও রয়েছে।
মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘২৫ কেজি চাল দিয়ে প্রায় এক মাস সংসার কী চলে বলেন? এই বেকার সময়ে সরকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত।’
সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনের টুমচরের জেলে সালাম মিয়া বলেন, এক মাসে যা ইলিশ পেয়েছেন, তাতে দাদন পরিশোধ হয় না। এখন অভিযানের সময় ঘরে বসে থাকা কষ্টকর। তারা আইন মানতে চান, কিন্তু কী করে খাবেন, তার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় তারা মৎস্য পল্লিগুলোয় প্রচার এবং মৎস্যজীবী, আড়তদার ও বরফকলের মালিকদের নিয়ে সভা করেছেন। ৫৯টি ইলিশসমৃদ্ধ ইউনিয়নের টাস্কফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলায় মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে থাকবে। দুষ্কৃতকারীদের ঠেকাতে মেঘনা নদীতে নজর রাখার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। নৌ পুলিশও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব স্থান থেকে জেলেরা নদীতে নামার চেষ্টা করবেন, সেখানে অভিযান চালাবে।
রিপন কান্তি জানান, মা ইলিশ নিধনকারীদের বিচারে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৭৯ হাজার জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ৫২৪ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।