More

    আগৈলঝাড়ায় সন্ধ্যা নদী বালু দিয়ে ভরাট করে ইট—বালুর ব্যবসা করছে প্রভাবশালীরা

    অবশ্যই পরুন

    বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার এক সময়ের খরস্রোত পয়সারহাটের সন্ধ্যা নদী বালু দিয়ে ভরাটের কারনে আজ যেন বিবর্ন। সৌন্দর্য্য হারানোর পাশাপাশি হারিয়েছে খরস্রোত ও নাব্যতা। নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে গত নয় বছর যাবত ঢাকা—পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সন্ধ্যা নদীর পয়সারহাট বন্দর ও পয়সারহাট সেতুর দুই পাশসহ বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে বালু দিয়ে ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণসহ ইট—বালুর ব্যবসা করে আসছে। নদী দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নদী কমিশন নদী দখলদারদের তালিকা তৈরীর জন্য নির্দেশনা থাকলেও আগৈলঝাড়ায় সন্ধ্যা নদী দখলের তালিকা সম্পন্ন শেষ করলেও প্রশাসন তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন একবার অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। দখলদার বজলুল হক বখতিয়ার, বাবুল সিকদার বলেন, আমরা সন্ধ্যা নদী দখল করিনি।

    ওই জায়গা আমাদের রেকডীর্য় জায়গা।  স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের সন্ধ্যা নদীর আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট এলাকায় শত বছর পূর্বে গড়ে উঠে বরিশালের বৃহতম ব্যবসায়ী বন্দর। নদীর তীর ঘেষে দুই পাড়ে এখানে প্রায় সহস্রাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে পয়সারহাট ঢাকা চারটি বড় লঞ্চ চলাচল করে আসছিল। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় নয় বছর ধরে ঢাকা পয়সারহাট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে পয়সারহাট বন্দরের সহস্রাধিক ব্যবসায়ী। স্থানীয় লোকজন জানান, এক সময় সন্ধ্য নদী খুবই স্রোতে ছিল। নদীটি প্রায় ১২ থেকে ১৪শ ফুট প্রশস্থ ছিল। আশপাশে যতগুলো নদী রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী গভীর ছিল সন্ধ্যার পয়সারহাট এলাকা। এ নদীকে ঘিরেই পয়সারহাট ব্যবসায়ী বন্দর জমে উঠেছিল। এ বন্দরটি দক্ষিনাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী বন্দর।

    বর্তমানে দখলের কারনে সন্ধ্যা নদীর পয়সারহাট এলাকার প্রশস্ততা সংকুচিত হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর প্রশস্ততা ২ থেকে আড়াইশ ফুট হয়ে গেছে। নৌ পথের পাশাপাশি সড়ক পথে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আওয়ামীলী সরকার ১৯৯৭—১৯৯৮অর্থ বছরে পয়সারহাট নদীতে সেতু নির্মানের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮টি পিলারে ২৬০ দশমিক ৪০ মিটর দৈর্ঘ্য সেতু নির্মান প্রকল্প গ্রহন করেন। যা বাস্তবায়নে ব্যায় হয় ১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্ধোধন করেন। প্রভাবশালীদের দখলের কারনে নদীটি আজ সৌন্দর্য্য হারিয়েছে। হারিয়েছে নদীর স্বাভাবিক গতি পথ। প্রভাবশালী নদী ভরাট করে গড়ে তুলেছেন পাকা স্থাপনা, স্ব—মিল, ইট বালুর ব্যবসার মাঠ। দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা গ্রামের বজলুল হক বখতিয়ার, বাবুল সিকদার ও গাউস বক্তিয়ারসহ প্রমুখ।

    এ ছাড়াও বাগধা বাজারসহ নদীর বিভিন্ন স্থানে আরো ১০—১২ জন প্রভাবশালী নদী দখল করেছে বলে এলাকাবাসি জানান। সন্ধ্যা নদীর বাগধা বাজার এলাকায় নদীর মধ্যে পাকা ভবন নির্মান করেছেন একাধিক প্রভাবশালী। পয়সা—বাগধা—সাতলা সড়কের চাদত্রিশিরায় সন্ধ্যা নদী বালু দিয়ে ভরাট করে ব্যবসা করে আসছে বজলুল হক বখতিয়ার ও বাবুল সিকদার নদী দখল করে ব্যবসার জন্য বালু ভরাট করে আসছে। ভরাটের ব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, আমাদের এই জায়গার কাগজপত্র রয়েছে। আমাদের রেকডীর্য় জায়গা আমরা ভরাট করছি। এ সময় পয়সারহাট বন্দরের ব্যবসায়ী আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, নদী দখলের ফলে দিন দিন নদী সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এক সময় এখানে বড় বড় লঞ্চ চলত। গত পাঁচ বছর ধরে এখানে লঞ্চ আসে না। উজিরপুরের বৈঠাঘাটা টার্মিনালে লঞ্চ ভিরে সেখান থেকে ট্রলারযোগে মালামাল পয়সারহাট বন্দরে আনতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দখলদারদের বিরুদ্ধে কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, দখলের কারনে নদীটি দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

    প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করা সত্বেও কোন ব্যবস্থা নেননি। বর্তমানে নদীর নাব্যতা হারানোর কারনে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নদীটি খনন করে ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সন্ধ্যা নদীর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ সরকারের কাছে দাবি জানান। পয়সারহাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ফিরোজ সিকদার বলেন, দখল ও নাব্যতার কারনে নদীটি মরে যাওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। ঘাটে লঞ্চ না আসায় ট্রলারে করে বৈঠাঘাটা থেকে  মালামাল পরিবহনে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাকাল ও বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিপুল দাস ও আমিনুল ইসরাম বাবুল ভাট্টি বলেন, দখলদাররা কেউ কেউ জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। আমরা উপজেলা সেটেলম্যান কর্মকর্তাকে রেডর্ক না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তার পরেও কেউ কেউ রেকর্ড নিয়েছে। নদী দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদী দখল করে কেউ যদি বালু ভরাট করে তা উচ্ছেদ করা হবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদী দখলের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

    সম্পর্কিত সংবাদ

    সর্বশেষ সংবাদ

    গণমাধ্যম কর্মী রিফাত হোসেন (জামাল) অসুস্থ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি

    গণমাধ্যম কর্মী রিফাত হোসেন (জামাল) বেশ কিছুদিন ধরে লিভারজনিত জ্বরসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে...