আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধিঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেই কোন অভিযান। কাগজপত্রবিহীন নিয়ম বহিভুর্তভাবে গড়ে ওঠা অনুমোদনহীন অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযানের কড়া নির্দেশনা থাকলেও তার কোন বাস্তবায়ন নেই আগৈলঝাড়া উপজেলায়।
সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা—নিরীক্ষা করা এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায় জনগণের সাথে বছরের পর বছর প্রতারণা করে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও কোন রকমেই বন্ধ করতে পারছে না প্রশাসন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সদরে দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একটিতে জরিমানা করে অন্যটিতে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে ইমামা বানিন। রেজিস্টার্ড চিকিৎসক না থাকা, হাতুড়ে টেকনোলজিস্ট দিয়ে মানসম্মত পরিবেশ না থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে বাণিজ্য করায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনেরা সরকারের তালিকাভুক্ত অবৈধ, ভুয়া প্রতিষ্ঠান বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ভুয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে বছরে একবার সিভিল সার্জন, ড্রাগ সুপার ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট দিন তারিখ জানিয়ে পরিদর্শনে আসেন। কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসলে প্রতিষ্ঠানের অনেককে পাওয়া যায় না। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিয়ে গড়া সংগঠন “ধাগৈলঝাড়া ডায়গনস্টিক ক্লিনিক ও ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন” সংগঠনের মাধ্যমে চাঁদা তুলে কর্মকর্তাদের আপ্যায়িত করে তেল খরচের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে তাদের বিদায় করে দেয়া হয়।
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, তাদের অফিসের ২৯১১নং স্মারকের এক পত্রে লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের জানতে চাওয়া তালিকায় আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন স্বাক্ষরিত ২৮৫৭নং স্মারকে মোট ৫টি অবৈধ হাসপাতাল ও ৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করা হয়।
বর্তমান ওই তালিকায় উপজেলায় মোট ১২টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের অবস্থান থাকলেও সেখানে নেই কোন অভিযান। তবে অনেক অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে নাম নেই এই তালিকায়। প্রশাসন অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির পরেই ওই প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পায় “অবৈধ তালিকায়” উঠেছে তাদের নাম। এরপর শুরু হয় ম্যানেজের জন্য দৌড়ঝাঁপ। এক পর্যায়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে নতুন সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নতুন উদ্যমে তারা শুরু করে প্রতারণার ব্যবসা।
এক সময়ে অবৈধ তালিকায় নাম ছিল উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসহ ২৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম। এখন তা নেমে এসেছে ১২টিতে। যার মধ্যে নতুনভাবে গড়ে ওঠা ডেন্টাল ক্লিনিকের কোন নামই নেই। ভায়া ওই প্রতিষ্ঠানে হাতুড়ে টেকনোলজিস্ট দিয়ে রোগীদের পরীক্ষার ভুল রিপোর্ট প্রদানের কারণে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে রোগীরা।
রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসকেরা চিকিৎসা প্রদান করায় তা রোগীদের ভুল চিকিৎসার প্রমাণও রয়েছে ভূরি ভূরি। অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার জেনেও হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক ও হাতুড়ে চিকিৎসকেরা ওই সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য রোগীদের পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.বখতিয়ার আল মামুন বলেন, প্রতি হাসপাতালে ডাক্তার রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয় না। অনেকের লাইসেন্স আছে তবে তা রিভিউ নেই।
অবৈধ হাসপাতাল, ডেন্টাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের জন্য প্রশাসনিকভাবে চিকিৎসকেরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে না পারায় অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে ম্যাজিষ্টে্রটসি’র জন্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার বিষয়ে আমরা রোগীকে পরীক্ষা করতে বলি, তারা কোথায় পরীক্ষা করাবেন সেটা চিকিৎসকদের জানার বিষয় নয় বলেও জানান তিনি। ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্তসহ তালিকার বাইরে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সহসাই অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে অবৈধ, ভুয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।