প্রান্ত মিস্ত্রী পিরোজপুর: পিরোজপুরের কলাখালীতে বিএনপি কার্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রবাসী ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার নামের এক ওয়ার্ড বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে জমি দখলের এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের অবহিত করা হলেও কোনো প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী।
প্রবাসীর মেঝ ভাই তোবারেক কাজী জানান, গত ১ মাস পূর্বে স্কটল্যান্ড প্রবাসী সেজ ভাই কাজী বাহাদুর ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে কলাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৩ শতক ডোবাসহ পতিত জমি ক্রয় করেন।
গত ১ সপ্তাহ আগে ওই এলাকার বাসিন্দা এবং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিদ্দিক হাওলাদার ওই জমি তার দাবি করে কলাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ের একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ওই জমি দখলে নেন। এ সময় জমি দখলে বাঁধা দিলে তাদের নানানভাবে হুমকি ধামকি দেন ওই নেতা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কাজী বাহাদুর মুঠো ফোনে বলেন, ” আমি ও আমার স্ত্রী নুসরাত জাহান ক্রয় সূত্রে মালিক। এখানে আমার ক্রয় করা ১৩.৮৫ শতাংশ, আমার শাশুড়ির ৪. ৬১ শতাংশ এবং মামা শ্বশুরের ৯.২৩ শতাংশ জমি ওখানে আছে। আমি এই জায়গা ক্রয়ের সাথে সাথে সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার বিএনপির কার্যালয়ের ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। আমি আমার এলাকার বিএনপির সভাপতি চাঁন সরদার ও সাধারণ সম্পাদক এনাম মৃধাকে জানাই। তাহারা ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোন কর্ণপাত করেনি।
বিএনপির কারো মতামত নিয়ে ব্যানার টাঙানো হয়নি। সদর থানার ওসি মো. রবিউল ইসলামকে স্কটল্যান্ড থেকে ফোন জানিয়েছি।তিনি বলেছিলেন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিন্তু অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এবিষয়ে কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ডালিম ডাকুয়া বলেন, অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান ডাকুয়া একজন ভূমি দস্যু। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চাঁন ডাকুয়ার সঙ্গে মিলেমিশে জমি দখল ও নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত ছিলো।
বিষয়টি পিরোজপুর সদর থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। তবে থানা পুলিশও এ বিষয়ে নির্বাক বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার বলেন, “এটা আমার পিতার ক্রয়কৃত সম্পত্তি এ জন্য আমি এই সাইনবোর্ড টানিয়েছি। বিএনপির সাইনবোর্ড টানিয়েছেন দলের অনুমতি নিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- দলীয় সাইনবোর্ড টানাতে অনুমতি লাগবে কেন? আমরা গত ১৭ বছর বাহিরে বের হতে পারি নাই। এখন একটা কার্যালয় বানিয়েছি। সেই ব্যানার কারা যেন ছিড়ে ফেলছে। স্কটল্যান্ড প্রবাসীসহ সবার বিরুদ্ধে আমি মামলা দায়ের করবো।”
এ বিষয়ে কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মৃধা বলেন, “দলীয় কার্যালয় বা ব্যানার টাঙাতে হলে অনুমতি নিতে হবে। অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার কোন অনুমতি নেয়নি। তিনি একজন ভূমিদস্যু। সভাপতি সিদ্দিক এবং ওই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সোহেল শেখের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। তারা নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত। অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার এর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কলাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন সরদার চাঁন বলেন, বিএনপির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এক ব্যক্তির জমি দখলের অভিযোগ পেয়েছি। আমি তাকে ওই সাইনবোর্ড নামাতে বলেছি। পরে সাইনবোর্ডটি নামিয়েছে কি-না তা জানিনা।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওকে সাইনবোর্ড টানাতে বলছে কে? ওরে তো পিটানো দরকার। এ বিষয়ে আমি এখনি ব্যাবস্থা নিচ্ছি।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, আমি অভিযুক্ত সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদাকে ওই জায়গার কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
