ঝালকাঠির রাজাপুরে শিক্ষা ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে সাইফুল হক নামের এক মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে।
সাইফুল হক রাজাপুর উপজেলার চাড়াখালী মাদরাসার সুপার। তার বাবা মুজাম্মিলুল হক মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা বলে জানা গেছে। বুধবার রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তফা আলম সই করা নোটিশে বলা হয়, আপনি দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসায় অনুপস্থিত আছেন।
বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকা আইনের পরিপন্থি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিম চাড়াখালী আযিযীয়া দাখিল মাদরাসার (আলিম প্রস্তাবিত) সুপার মাওলানা সাইফুল হক বেশ কয়েকবছর ধরে ফেসবুকে প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে যৌন উত্তেজক হারবাল ওষুধ বিক্রি করছেন।
এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভোগ করেন শিক্ষা ছুটি। অথচ শিক্ষা ছুটি নিয়ে তাকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন, উচ্চতর বিশেষ ডিগ্রি অর্জন বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত থাকার কথা। এ বিষয়ে জানতে বুধবার দুপুর সোয়া ১টায় ওই মাদরাসায় যান সংবাকর্মীরা।
মাদরাসা সংশ্লিষ্ট কাউকে না পেয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পৌনে ১টায় মাদরাসা ছুটি হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, মাদরাসা সুপার অনুপস্থিতই থাকেন বেশি। পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে সংবাকর্মীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন পশ্চিম চাড়াখালী আযিযীয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘আমি তিন বছরের শিক্ষা ছুটিতে আছি।
ছুটি নিয়ে আমি কী করি তা দেখার কী দরকার আপনার? আমি হারবাল ওষুধ বিক্রি করি সেটা যদি রিপোর্টে লেখেন, তাহলে আপনাকে ছাড়বো না। আইসিটি আইন জানেন তো? একদম মামলা করে দেবো। আমার প্রতিষ্ঠানে আপনি আমাকে কল না দিয়ে কেন গেছেন? যদি কোনো তথ্য বেশি দরকার হয় আপনি সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করবেন, তখন দেখাবো কার বা কোন কাগজের বলে আমি এতদিন ছুটিতে আছি।
’ মাদরাসার সভাপতি মাওলানা মোজাম্মিলুল হক বলেন, ‘সব কথা মোবাইলে বলা যায় না। তবে উনি আইনগত ও বিধিসম্মত ছুটিতে আছেন। তার শিক্ষা ছুটিও শেষ হয়ে গেছে। সে যোগদান করলে করবে, না করলে সে থাকতে পারবে না। সামনাসামনি আসবেন, তখন বলবো।
আপনাদের কর্তব্য থাকলে যা করার সেইটা করেন।’ এ বিষয় রাজাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা আলম বলেন, ‘উনি যে কী ছুটিতে আছে আমি জানি না। একবার বলেছিল শিক্ষা ছুটির কথা। তবে আমি তাকে তার ছুটির রেজুলেশন কাগজপত্র নিয়ে সশরীরে উপজেলা শিক্ষা অফিসে আসতে বলেছি।
কিন্তু সে কোনো ডকুমেন্টস নিয়ে আসেনি। তার এই অনিয়ম গত ৫-৬ মাস ধরে আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই শোকজ করে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
’ ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুনিল চন্দ্র সেন জানান, এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একইসঙ্গে একাধিক কোনো পদে, চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।
এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এমপিও বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।