আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার খামারিরা। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে দুই শতাধিক খামারে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ উপজেলায় প্রায় দশ হাজার ষাঁড় ও গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। বাড়তি লাভের আশায় ঈদের আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কোনো প্রকার ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করেই দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন এসব খামারিরা। উপজেলার বাশাইল শামীম সিকদারের গরুর ফার্মে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মাথার উপর ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা, নিচে পাকা করা ফ্লোর।
খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের দেশী খাদ্য। সার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক খামারে এভাবেই আদর—যত্নে লালিত হচ্ছে গরু গুলো। ২৪ ঘণ্টা এমন পরিচর্যা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব খামারে বেড়ে ওঠা গরু গুলো হয়ে উঠছে হৃষ্টপুষ্ট ও সুন্দর। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামের খামারি শামীম শিকদার জানান, তিনি ২০১২ সালে ২০টি দেশি প্রজাতির ষাঁড় কিনে মোটাতাজা শুরু করেন।
এখন বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৭০টি ষাঁড় রয়েছে। বাড়িতেই ষাঁড়গুলো পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাহায্য সহযোগিতায় লালন পালন করে আসছেন তিনি। গরুগুলো এরই মধ্যে অনেক বড় ও মোটাতাজা হয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদে গরু গুলো বিক্রি করবেন। তিনি আরও জানান, ষাঁড়গুলোকে কোনো অসাধু পন্থা অবলম্বন না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে খড়, খৈল, ভুসি ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা খরচ একটু বেশি হলেও গরু কোন রকমের ঝুঁকির মধ্যে থাকে না। এ বছর কোরবানির জন্য অনেকেই এভাবে গরু মোটাতাজা করছেন।
উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আস্কর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ২০টি গরু মোটাতাজা করছেন। গরুর কোন সমস্যা মনে হলেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজনদের কাছ থেকে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে গো—খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় মোটাতাজাকরণ ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। কোরবানিতে তিনি গরুগুলো বিক্রি করবেন।
তবে গরুর দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। নুর ফিশারিজ এর মালিক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় এখন তিনি এ খামার ব্যবসায় জোর দিয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ৩৫টি গরু রয়েছে। সন্তানের মত খেয়াল রেখে খামারে গরুগুলো লালন—পালন করছেন। তিনি আরও জানান, গ্রাম থেকে গরু কিনে পরবর্তীতে ৫ থেকে ৬ মাস ধারে নিজ খামারে তা যত্ন নিয়ে পালন করেন তিনি। গরু খামার ব্যবসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকেই এ পেশায় আসতে উৎসাহিত হবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রদীপ কুমার বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। তার জানা মতে বাশাইল গ্রামের শামীম শিকদারের গরুর খামারটি সবচেয়ে বড় খামার। তিনি কয়েকবারই সেখানে গিয়েছেন। আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে একেবারেই প্রাকৃতিক ও নির্ভেজাল পদ্ধতিতে অনেকেই গরু লালন—পালন করেছেন বিভিন্ন খামারি।
এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, কিছু খামারে বড় ধরনের ষাঁড় বা দামি গরু সাধারণত ঢাকাসহ বাহিরের ক্রেতারাই বেশি আকৃষ্ট হয়ে থাকেন। স্থানীয়ভাবে এই গরুর ক্রেতার খুবই সংকট। তিনি আরও জানান, তারা সার্বক্ষণিক এলাকার খামারিদের খোঁজ খবর রাখেন। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে কোন রকম ক্ষতিকারক ঔষধ কিংবা ইনজেকশন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন খামারিদের। এছাড়া গরু মোটাতাজাকরণের বিষয়ে খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠে পর্যায়ে কাজ করছেন।